Abdullah Al Imran এর টেকটিউনস

Thursday, January 26, 2012

আনন্দ মোহন কলেজ এর

 সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত আনন্দ মোহন কলেজ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর অন্যতমএ কলেজের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসআনন্দ মোহল কলেজ ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর কার্যক্রম শুর" হয় ১৯০৯ সালেএই মহান উদ্য্যোগের সঙ্গে যাঁর নাম জড়িয়ে আছে, তিনি হচ্ছেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সমাজসংস্কারক ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসু ১৮৮৩ সালে ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরের রাম বাবু রোডে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে "ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশনআনন্দমোহন বসু ১৮৮২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত প্রথম শিক্ষা কমিশনের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ছিলেনতাছাড়া তিনি কলকাতার সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেনকলকাতার বেশকিছু গণ্যমান্য শিক্ষাবিদ নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল সিটি কলেজ পরিচালনা করতেন, আনন্দমোহন বসু ছিলেন সেই কাউন্সিলের সভাপতি১৯৮০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন "ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুলনামে অভিহিত হয়১৮৯৯ সালে আনন্দমোহন বসু কলকাতা থেকে ময়মনসিংহ এলে ময়মনসিংহের স্থানীয় উসাহী অধিবাসীগণ ছাড়াও "ময়মনসিংহ সভাএবং "আঞ্জুমানে ইসলামিয়াএর যৌথ আবেদনে ময়মনসিংহে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী জানানো হয়এ দাবীর পরিপ্রেক্ষীতে কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিলের সভাপতি আনন্দমোহন বসু ১৯০১ সনের ১৮ জুলাই সিটি কলেজিয়েট স্কুলকে ময়মনসিংহ সিটি কলেজনামে দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে রূপান্তর করে এবং একে কলকাতার সিটি কলেজের সাথে যুক্ত করেনপ্রাথমিক অবস্থায় কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিলের আর্থিক সহযোগিতায় ময়মনসিংহ সিটি কলেজ পরিচালিত হতো, পরের বছর ১৯০২ সালের এপ্রিল মাসে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দ্বিতীয় গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেইতোমধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থ সাহায্যে কলেজের পুরোবাগে রাস্তার পাশে কলেজের জন্য পাকা ভবন নির্মিত হয়১৯০৬ সালে আনন্দমোহন বসুর মৃত্যুর পর ময়মনসিংহ সিটি কলেজ নানা সংকটের সম্মুখীন হয়প্রথমত কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিল অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ময়মনসিংহ সিটি কলেজকে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিযুক্তকরণের জন্য কলাকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট দাবী পেশ করেএ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৮ সালের ৩১ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ময়মসসিংহ সিটি কলেজের সংযুক্তি সম্পূর্ণর"পে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়এই অবস্থায় কলেজের কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়তখন প্রিন্সিপাল বৈকুন্ঠনাথ চক্রবর্তী কলেজটির পুনর্গঠনের উদ্যোগে নেন এবং তকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. জে. আর. ব্ল্যাকউডের শরণাপন্ন হনমিদ জে. আর. বল্যাকউড স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও উদ্যমী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠন করে

" ময়মনসিংহ কলেজ নামে কলেজটিকে পুনুজ্জবীত করেনএ কমিটি কলেজের পরিচালনা ও যাবতীয় খরচের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং কলেজের জন্য তহবিল ও নতুন জায়গা সংগ্রহের জোরালো প্রচেষ্টা গ্রহন করেকালীন ভাবরত সরকারের গ্রান্ট-ইন-এইড- এর আওতায় অর্থ সাহায্য প্রদােেনর জন্য বিভাগীয় কমিশনার এর সাথে কমিটি সাক্ষা করেবিভাগীয় কমিশানার কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৫৫,০০০/-(পঞ্চান্ন হাজার)  টাকা বরাদ্দ দেনপাশাপাশি কলেজের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থানীয় কয়েকজন জমিদার ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগতভাবে ১,১৮,৩৯৫/- (এক লক্ষ আঠার হাজার তিনশত পঁচানব্বই) টাকা এককালীন অনুদান প্রদান করেনএক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম ও অনুদানের পরিমাণ নিন্মর"প:

১. মহারাজা শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী (মুক্তাগাছা) ৪৫,০০০/- টাকা

২. রাজা যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ( রামগোপালপুর ) ৩০,০০০/- টাকা

৩. রাণী দিনমনি চৌধুরাণী ( সন্তোষ) ২০,০০০/- টাকা

৪. বাবু হেমচন্দ্র চৌধুরী (আম্বারিয়া) ১০,০০০/- টাকা

৫. রাজা জগতকিশোর রায় চৌধুরী (গৌরীপুর) ৫,৫০০/- টাকা

৬. বাবু প্রমথনাথ রায় চৌধুরী ( সন্তেষ) ৫,০০০/- টাকা

৭. রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী (পুটিয়া) ১,০০০/- টাকা

৮. শ্রীমতি বামা সুন্দরী দেবী (ভবানীপুর) ১,০০০/- টাকা

       ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট, আনন্দমোহন বসুর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী বন্ধু, আঞ্জুমানে ইসলামিয়া - এর সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ কলেজের জন্য কাঁচিঝুলীতে ২৬ বিঘা জমি দান করেন এবং তার বন্ধু আনন্দমোহন বসুর নামে কলেজটির নামকরণের প্রস্তাব করেনমৌলভী হামিদ উদ্দিন ছাড়াও তার জমির পাশ্ববর্তী আরো কয়েক বিঘা জায়গা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কলেজের জন্য দান করেনসরকারি-বেসরকারি নানা উস থেকে সংগৃহীত অর্থ এবং জমি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজটি কাঁচিঝুলীর বর্তমান স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নতুন ভব নির্মানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে ১৯০৮ সালের শেষের দিকে "ময়মনসিংহ কলেজএর নাম পরিবর্তন করে মৌলভী হামিদ উদ্দিন এর
প্রস্তাবমতো কলেজের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা আনন্দমোহন বসুর নামানুসারে " আনন্দ মোহন কলেজ রাখা হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়কয়েক বছরের মধ্যেই এটি একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়ফলে ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে প্রথম গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেকলেজের সার্বিক উন্নয়নে ময়মনসিংহ পৌরসভার তকালীন চেয়ারম্যান রায় বাহাদুর শ্যামাচরণ রায় এর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়

১৯১৪ সালে কলেজটি প্রথম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর থেকে কলেজরি খ্যাতি এবং ছাত্রসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কালকমে এটি এতদঞ্চললের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে
১৯৬৪ সালের অক্টোবরে কলেজকিে সরকারিকরণ করা হয়১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশপ্রতিষ্ঠার পর কলেজের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ একাডেমিক কার্যক্রমে নতুন গতি সঞ্চার হয়শিক্ষকের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস ও একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালে যেখানে আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্র ছিল ১৭৮ জন এবং শিক্ষক ছিলেন ৯জন, সেখানে বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ এবং শিক্ষকের পদ ২০১টিবর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সসহ ১৮টি বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্স চালু আছেছাত্রদের জন্য ৩টি ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য ২টি ছাত্রীনিবাস রয়েছেপ্রায় অর্ধলক্ষ পুস্তকসমৃদ্ধ একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছেতাছাড়া প্রতি বিভাগে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক পুস্তকসমৃদ্ধ সেমিনার-লাইব্রেরিকলেজে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট কার্যক্রম চালু রয়েছেএকাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধূলা, সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি শিক্ষা সহায়ক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা রয়েছে



শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ

একাডেমিক তথ্যাবলী আনন্দ মোহন কলেজে প্রতি কর্মদিবসে সকাল ৯ টা হতে ক্লাস শুরু হয় এবং বিকাল ৪টা পযর্ন্ত চলে।


টিউটোরিয়াল পরীক্ষা
প্রতিশিক্ষাবর্ষে কম করে হলেই দু’টি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা গ্রহন করা হয় এবং টিউটোরিয়াল ক্লাস ও ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে টিউটোরিয়াল বিষয়ে নম্বর প্রদান করা হয়।

বিভাগীয় মিড টার্ম ও র্টাম ফাইনাল পরীক্ষা প্রতি শিক্ষাবর্ষে মেজর ও নন-মেজর কোর্সের উপর বিভাগীয় মিড টার্ম ও র্টাম ফাইনাল পরিক্ষা  গ্রহন করা হয়। এই সব পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাক্রম নির্ধারণ করে বিভাগের পক্ষ থেকে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়।
কেন্দ্রীয় মডেল টেস্ট কলেজে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতি শিক্ষাবর্ষে মেজর ও নন-মেজর কোর্সের উপর কেন্দ্রীয় মডেল টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় সকল কোর্সে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হতে ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতি বিভাগ হতেই তিনজনকে কেন্দ্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।

উপস্থিতি প্রতিটি বিভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। প্রতি তিন মাস অন্তর ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি মূল্যায়ন করে ৬০% এর নীচে হলে তাকে সতর্ক করে দেয়া এবং প্রয়োজন অনুসারে অভিভাবকদেরকেই পত্র দ্বারা বিষয়টি অভিহিত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কোন ছাত্র-ছাত্রীর ৭৫% ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় না।
দেয়ালিকা প্রকাশ ও শিক্ষা সহায়ক অন্যান্য কার্যক্রম প্রতিটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিতভাবে জাতীয় কর্মসূচী ও বাংলা সংস্কৃতি বিষয়ক নানাবিধ কর্মসূচি আলোচনা করে। যেখানে তারা নিজস্ব যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পায়।

আচারণ প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে ছাত্রসূলভ আচারণ শিক্ষা দেয়া হয়। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে তারা একজন মূল্যাবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠার সুযোগ পায়।
সেমিনার প্রতিটি বিভাগে সমৃদ্ধ সেমিনার রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বই ইস্যু করা হয় এবং বিভাগীয় শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ক নানাবিধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

পত্রিকা প্রতিটি বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকা সংগ্রহ করা হয়। 
 ইনশাল্লাহ শীঘ্রই কলেজের উপর বিস্তারিত লেখা আসবে।

No comments:

Post a Comment