Abdullah Al Imran এর টেকটিউনস

Friday, January 27, 2012

একটি আত্মপর্যালোচনা

ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদের নাম লিপিবদ্ধ করার দাবী
             ****** লিখেছেন: নূর আলম, আইএনবি

                                                               এ দেশের শ্রেষ্ঠ একটি কলেজ ময়মনসিংহ, আনন্দ মোহন কলেজ। ময়মনসিংহ শহরের হামিদ উদ্দিন রোড, কলেজ রোড এবং কাচিঝুলী মহল্লার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেসময় ছিলো ব্রিটিশ আর জমিদারদের দ্বৈত শাসন। কঠোর অনুশাসন। কিন্তু, এরপরও শিক্ষা বিস্তারের কোন কমতি ছিলো না। এ অঞ্চলে। আনন্দমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে রাজা জমিদারদের পাশাপাশি দুই ব্যক্তি দুই বন্ধুর ঘামের ফোঁটা আজও আনন্দ মোহন কলেজের অট্টালিকার প্রতিটি ইটের পাঁজরে গ্রথিত হয়ে আছে। এক বন্ধু ব্যারিস্টার আনন্দ মোহন বসু। ওই সময়ের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিক্ষাবিদ রাজনীতিক সমাজ সংস্কারক। আরেক বন্ধু, ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট শিক্ষানুরাগী মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহ্মদ। কালের বিবর্তনে ব্যারিস্টার আনন্দ মোহন বসু ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছেন কিন্তু মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ রয়ে গেছেন ইতিহাসের ছাইচাপা আগুনে। দুই বন্ধুই ছিলেন আনন্দ মোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম দুই সিপাহশালার। স্মর্তব্য, ময়মনসিংহ শহরের  হামিদ উদ্দিন রোড মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর স্বাক্ষ্য বহন করছে আজও। ময়মনসিংহের  অন্যতম প্রবক্তা পুরুষ, ধর্ম পরায়ন মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ ছিলেন শিক্ষানুরাগী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। যতদুর জানা যায়, নিকটতম আত্মীয় এক বৃদ্ধা ছাড়া হামিদ উদ্দিন আহমদ এর নাতনী মোসাম্মৎ ফজিলাতুল নেছা ওরফে লাইলী বেগম কেউ আর বেঁচে নেই।
আনন্দ মোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এই ছাই চাপা আগুন ব্যক্তিটি কাচিঝুলীতে ২৬ বিঘা জমি অকাতরে দান করেই নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাননি সেই সাথে তার প্রিয়তম বন্ধু আনন্দ মোহন বসু’র নামে কলেজটির নামকরণের প্রস্তাব করেন এবং ১৯০৮ সালের শেষের দিকে মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমেদের প্রস্তাব মত কলেজটি আনন্দ মোহন বসুর নামানুসারে আনন্দ মোহন কলেজ রাখা হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।
মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর মতো একজন প্রজ্ঞা সম্পন্ন উদার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বের কারণেই আজ এটা সম্ভব হয়েছে। আনন্দ মোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার আড়ালে যে মানুষটি সেই সময়ে ২৬ বিঘা জমি নির্বিঘেœ নিঃশ্চিন্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দিয়ে দিতে পারেন তিনি তো আমাদের প্রাতঃস্মরণীয়। প্রতি মুহুর্তের অবিস্মরণীয় এক নাম। অথচ, এতকাল পরও আনন্দ মোহন কলেজ এই মহান ব্যক্তিটির জন্যে কী করেছে তা ময়মনসিংহবাসীকে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
আনন্দ মোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অসামান্য অবদান তাদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ একথা অকপটে সবাই বলে গেছেন। আনন্দ মোহন কলেজের ১শ বছরের পূর্তি অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কলেজটি প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান পুরুষ হিসেবে মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ-এর নাম বিনয় চিত্তে স্মরণ করেছেন।
কিংবদন্তীর এই প্রাণ পুরুষ মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর কাছে সবিনয় ঋণ স্বীকার করে ময়মনসিংহবাসীকেও সেখান থেকে উত্তাপ নেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন আনন্দ মোহন কলেজ তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখা। তার বন্ধু, আনন্দ মোহন বসু আজ যদি দেখতে পেতেন তারই বন্ধু মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর আনীত প্রস্তাবে তার নামটির পাশে তার বন্ধুর নামটি নেই, তাহলে তিনি (আনন্দমোহন বসু) কি কষ্ট পেতেন না?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময় বদলেছে, বদলেছে দিন। কালের আবর্তনে স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে, তাদের স্বর্ণখচিত অতীতকে যে অতীত, একটি  স্বর্নোজ্জল বর্তমান এই প্রজন্মকে উপহার দিয়েছে। যার পেছনের মানুষদের নাম আজ অজানা থেকেছে। কিন্তু ইতিহাস, ইতিহাসের পথেই চলে এবং  একদিন না একদিন সেই ইতিহাসই সময়ের মূর্ত প্রতীক হয়ে আমাদের সামনে সসম্মানে এসে দাঁড়িয়ে যাবে। মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর নাম তখন গর্বচিত্তে ময়মনসিংহবাসী স্মরণ করবেন।
এদিকে, ময়মনসিংহবাসী মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর নাম আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে লিপিবদ্ধ করার জন্য সর্ব মহলের দৃষ্ট আকর্ষণ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে প্রথমত: আনন্দ মোহন কলেজ কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি প্রস্তাবনা আকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে পারেন।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন কেন এই বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি, তা নিয়েও অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আনন্দমোহন কলেজের ছাত্রাবাসের একটি হলের নাম, একটি ল্যাবরেটরীর নাম একটি মিলনায়তনের নাম, এমনকি নিদেনপক্ষে আনন্দমোহন কলেজের বিশাল মাঠের একটি জায়গায় অন্তত একটি মসজিদ মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমেদের স্মরণে নির্মিত হলে হয়তো বা আমরা দায়মুক্ত হতে পারতাম।
তথ্যসূত্র: আইএনবি

No comments:

Post a Comment