Abdullah Al Imran এর টেকটিউনস

Friday, January 27, 2012

৩২ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতিঃ প্রসংগ সংবিধান


প্রস্তাবনাঃ
(ব্যস্ত পাঠক এই অংশটুকু বাদ দিতে পারেন)

সুপ্রিয় পরীক্ষার্থীবৃন্দ,

ক। আশা করি আপনারা সবাই চমৎকারভাবে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।৩১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা আক্ষরিক অর্থেই দরজায় কড়া নাড়ছে এবং মাত্র একমাস পরেই শুরু হতে যাচ্ছে এইমহারণশেষ এক-দুদিন “BCS: Our Goal” গ্রুপে প্রয়োজনীয় বিষয়ের চাইতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে বেশি আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলে অনেক সম্মানিত সদস্য অভিযোগ করেছেন।আমি এই অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি এবং এটি হবার পেছনে আমারো কিছুটা দায় রয়েছে সেটাও নতমস্তকে স্বীকার করছি।আমার আজকের লেখাটি অনেকটা সেই দায়বদ্ধতা থেকে প্রসূত।নানারকম অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় আমি আপনাদের যেটুকু মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি, এই লেখাটি সেই ক্ষতে সামান্য হলেও প্রলেপ দিতে পারে-এটাই আমার প্রত্যাশা

খ। মূল বিষয় আলোচনা করার আগে বিসিএস পরীক্ষার ঠিক একমাস আগে অর্থা এরকম সময়ে আমার যে অনুভূতি হত তা কিছুটা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিই।চলতি বাংলায় যাকে বলেবিশাল গাড্ডায় পড়া”- আমার অনুভূতি ছিল ঠিক এরকম।গাড্ডা শব্দটির অর্থ আমি জানিনা,সম্ভবত সমুদ্র বা এরকম কিছু।বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসের সাথে আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনা করলে যে খুব ভুল কিছু হবেনা তা আমার মতভুক্তভোগীমাত্রই স্বীকার করবেন।আর পরীক্ষার একমাস আগে এই আটলান্টিকের গভীরতা বেশির চাইতেও বেশি হয়ে প্রায় সব পরীক্ষার্থীর চোখেই ধরা দেয়।প্রতিদিন পড়তে বসতাম, এক-দুটি বিষয়(topic)এর পেছনে কয়েক ঘন্টা ব্যয় করতাম,তারপর সেগুলো মনে করার চেষ্টা করে দেখতাম অধিকাংশই ভুলে গিয়েছি।দিনশেষে ঘুমাতে যাবার সময় মনে হত-হায় হায়,আরো একটা দিন শেষ হয়ে গেল,কিছুই তো পড়া হলনা!

গ। প্রিয় পাঠক,আপনার যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে বলব প্লিজ হতাশ হবেন না।উইন্সটন চার্চিল বলেছিলেন- “ If you are going through hell, get going!”
আপনাদেরকেও একজন সহযাত্রী হিসেবে বলি,এত ভয়ঙ্কর পরিশ্রম যখন করেছেন,এই তো আর মাত্র কটা দিন,করুন না আরেকটু কষ্ট!যা পড়বেন তার হুবহু মনে থাকবে এমনটি কখনোই হবেনা।যেটি হবে,এই এখান থেকে একটু ওখান থেকে আরেকটু এরকম করে দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিতে নিতে আপনার অজান্তেই চমৎকার একটা ভিত্তিমূল বা Basic তৈরি হবে।পরীক্ষার হলে দেখবেন এই বেসিকটা আপনাকে খুব ভালোভাবেই বৈতরণী পার হতে সহায়তা করছে

ঘ। শিব খেরার “You Can Win” বইটিতে ব্যাপারে একটি মজার উদাহরণ পড়েছিলাম।প্রাচীনকালে যখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিলোনা,মানুষ তখন কুড়াল দিয়ে আঘাত করে পাথর কাটতো।দেখা যেত,একজন মানুষ পাথরের বিশাল একটি টুকরোর উপরে ঘন্টার পর ঘন্টা কুড়াল দিয়ে আঘাত করেই যাচ্ছে,পাথরের টুকরার কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা।এভাবে এক-দুইশ বার আঘাত করার পর হঠা দেখা যেত একশতম আঘাতের সাথে সাথে পাথরের টুকরাটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়েছে।আমরা বাইরে থেকে দেখছি যে একশতম আঘাতের ফলেই পাথরটি দুটুকরো হল-কিন্তু আসলেই কি তাই? প্রথম থেকে শুরু করে প্রতিটি আঘাত পাথরটিকে দুর্বল করেছে,তারপর সর্বশেষ আঘাত সেটিকে দ্বিখণ্ডিত করেছে

 ঙ। আমার মনে হয় এই একমাস আগে আমাদের অনেকের অবস্থাই এরকম-প্রচুর পড়াশোনা করছি কিন্তু টেরই পাচ্ছিনা আদৌ কোন উন্নতি হচ্ছে কিনা।প্রিয় পরীক্ষার্থী, বিশ্বাস করুন- আপনি নিজে বুঝতে না পারলেও এই ঘন্টার পর ঘন্টা পরিশ্রম প্রতিদিন আপনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।হতাশা ঝেড়ে ফেলুন, মাথায় যে চিন্তাই আসুক না কেন নিজেকে পরিশ্রমের নতুন পর্যায়ে উন্নীত করুন। বলা তো যায়না,হয়তো দেখা যাবে নিজের অজান্তেই আপনি পছন্দের ক্যাডারের প্রথম স্থান দখল করে বসে আছেন!

পুনশ্চঃ )এখানেদীর্ঘদিনবলতে প্রিলি থেকে শুরু করে পর্যন্ত সময় বুঝিয়েছি।এ কদিন আপনি যদি শুধু দিনে -১০ মিনিট খবরও দেখে থাকেন বা পত্রিকা পড়েন,এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসগুলোও নিশ্চিতভাবে আপনার বেসিক তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।কাজেই, “হায় হায়,আমি তো দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেইনি”-এমনটি ভেবে আফসোস করা থেকে বিরত থাকুন!

) শুরু করার আগে আমার আগের আর্টিকেলগুলোর মত এখানেও বলে নিই-আমি এখানে শুধুমাত্র নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি,আপনাদের কাউকে জ্ঞান দেবার মত ধৃষ্টতা আমার নেই।আমার কোন পরামর্শ আপনি যদি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তাহলে নির্দ্বিধায় তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।এটা কোন স্কুল কলেজ নয় এবং আমিও কারো শিক্ষক নই যে আমার কথা বেদবাক্যের মত অভ্রান্ত হবে।বিসিএস পরীক্ষায় আমার চাইতে অনেক বেশি নম্বর পেয়েছেন এরকম অসংখ্য মানুষ রয়েছেন এবং তাঁদের কেউ কেউ এই গ্রুপেই রয়েছেন।আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ,কাজেই প্রস্তুতির ব্যাপারে আপনার নিজস্ব সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত

প্রসংগ-সংবিধান

কেন সংবিধানের পেছনে অতিরিক্ত সময় দেবেনঃ

)বাকি আর্টিকেলগুলো লেখার সময় আমি মোটামুটি নির্দিষ্ট একটি কাঠামোতে প্রস্তুতি নেবার ব্যাপারে আলোচনা করেছি এবং নম্বর বন্টন অনুযায়ী বর্ণনা দিয়েছি।বাংলাদেশ বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে,সিলেবাস এতটাই বিস্তৃত যে বাংলাদেশের ইতিহাস,ভূগোল,পৌরনীতি,অর্থনীতি,সমাজনীতি ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই এখানকার অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে।পরীক্ষার মাত্র একমাস আগে এটার সিলেবাস দেখে আমি নিজে মোটামুটি মুর্ছা গিয়েছিলাম,হয়তো আপনাদেরও কেউ কেউ যাচ্ছেন!বাংলাদেশ বিষয়াবলীর ব্যাপারে টপিকভিত্তিক সাজেশন দেবার মত বিশ্লেষণ-ক্ষমতা আমার নেই,তবে এই একমাসে কেউ যদি বলেন যে দুইশত নম্বরের মধ্যে নিশ্চিতভাবে ৫০ নম্বর বা তারও অধিককমনপেতে কোন বিষয়টি ভালোভাবে পড়া উচিত-তাহলে আমি এক কথায় উত্তর দেবো-“সংবিধান

)দুঃখের বিষয়,একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক বাংলাদেশীর ক্ষেত্রেই সংবিধান পাঠ আবশ্যক অথচ বিসিএস পরীক্ষা দেবার আগে সংবিধান উলটে দেখার সৌভাগ্য(?) আমার হয়নি।আমাদের দেশটি আসলে কিভাবে চলে এটি বুঝতে সংবিধান পাঠের বিকল্প নেই।আর আগে ওই যে বললামবেসিক”,এইবেসিকশক্ত করতে সংবিধান পাঠ যে কতটা দরকারী তা বলে বোঝানো যাবেনা।সুনাগরিক হওয়া,দেশকে জানা ইত্যাদি বৃহ লক্ষ্যের জন্যে সংবিধান পাঠ আবশ্যক,তবে আমাদের ঠিক নাকের ডগায় যে পরীক্ষাটি উঁকি দিচ্ছে,সেই বিসিএস পরীক্ষায়বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে ভালো নম্বর তুলতেও সংবিধান পাঠ করা একান্ত জরুরী

)বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে যে কেউ দেখতে পাবেন বাংলাদেশ প্রথম এবং দ্বিতীয়পত্র মিলিয়ে প্রতিবারই ৫০+ নম্বর কম করে হলেও সংবিধান থেকে প্রশ্ন হয়েছে।এছাড়া,সংবিধান থেকে প্রশ্নের উত্তর দিলে ২০ নম্বরের রচনামূলক প্রশ্নে খুব অল্প লিখেও সহজেই ১৫+ নম্বর পাওয়া যায়,যেখানে অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরে গাদা গাদা লিখেও আপনি ১২ বা ১৩ এর বেশি পাবেননা।একটা খুব বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছিঃ মুসলিম যেসব পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ইসলামিয়াত পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা সবাই জানেন যে সুত্র উল্লেকপূর্বক আরবি আয়াত লিখলে প্রায় ৮০-৯০ ভাগ নম্বরও তোলা যায়।বাংলাদেশ বিষয়াবলীর সরাসরি সংবিধান বিষয়ক এমনকি কাছাকাছি কোন প্রশ্নের উত্তরে যদি আপনি বাংলাদেশ সংবিধান থেকে আর্টিকেল নম্বর উল্লেখ করে ভিন্ন রঙের কালিতে(সাধারণত নীল) কোটেশন তুলে দিতে পারেন তাহলে গড়পড়তা নম্বরের চাইতে অবশ্যই বেশি পাবেন

কিভাবে পড়তে হবেঃ

)সংবিধান পড়তে গিয়ে প্রথমেই আমার যে সমস্যা হয়েছিলো সেটি হচ্ছে এর প্রায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাছাকাছি কঠিন ভাষা।মুখস্তবিদ্যায় আমি ভয়াবহ রকমের খারাপ,সংবিধানের এরকম ভাষা লাইন-বাই-লাইন মুখস্ত করা আমার পক্ষে আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব ছিলো।তবে সুখের বিষয়,লাইন-বাই-লাইন সংবিধান মুখস্ত করবার কোন দরকার নেই।আপনি সংবিধানের আর্টিকেলগুলো পড়বেন,বুঝতে চেষ্টা করবেন এতে কি বলা হয়েছে এবং এরপর সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লিখবেন

)আগেই বলেছি যে সংবিধান লাইন বাই লাইন মুখস্ত করবার দরকার নেই,তবে একটি জিনিস করতে পারলে সবচাইতে ভালো হয়ঃ সংবিধানে যে ১৫৩টি আর্টিকেল রয়েছে তাদের নাম মুখস্ত করে ফেলা।যেমনঃ আর্টিকেল এর শিরোনাম হচ্ছেপ্রজাতন্ত্র”,আর্টিকেল এর শিরোনামরাজধানীইত্যাদি।১৫৩টি আর্টিকেলের নাম যদি মুখস্ত করতে পারেন(এটা এই মাসেও খুব সম্ভব-এর পেছনে যে সময় আপনি ব্যয় করবেন তার এক সেকেন্ডও বৃথা যাবেনা) তাহলে সংবিধানটি - বার ভালোভাবে পড়লেই যেখান থেকেই প্রশ্ন আসুক না কেন নিজের ভাষায় লিখতে পারবেন

)সংবিধান থেকে প্রতিবার কিছু ৎবাধা প্রশ্ন আসে-এগুলো বিগত বিসিএসের প্রশ্ন দেখলেই বুঝতে পারবেন।এধরণের ৎবাধা প্রশ্নের মধ্যে রয়েছেঃ
)সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের  মূলনীতি ব্যাখ্যা করুন
)সংবিধান অনুসারে আমাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করুন
) সংবিধানের পর্যন্ত যতগুলো সংশোধনী হয়েছে তাদের সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন
) বাংলাদেশের সংবিধান রচনার পটভূমি ইতিহাস বর্ণনা করুন
) বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আলোচনা করুন ইত্যাদি
এছাড়া একটুআনকমনপ্রশ্ন হিসেবে মাঝে মাঝে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কার্যাবলী, অর্থবিল, মন্ত্রীসভা ইত্যাদি এসে থাকে

)টীকা হিসেবে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আর্টিকেলের শিরোনাম থেকে ২৮তম বিসিএসে সরাসরি ২০ নম্বর এসেছিলো।১০ টি শিরোনাম সম্পর্কে অল্প একটু সঠিক বর্ণনা যারা দিয়েছেন তারা একেবারে অঙ্কের মত নম্বর পেয়েছেন।প্রতিবারই সংবিধানের আর্টিকেল থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন/টীকা থাকে,তাই সব না হলেও অন্তত পূর্ববর্তী বছরে এসেছে এগুলো এবং গুরুত্বপূর্ন মনে হয় এমন আর্টিকেলগুলোর শিরোনাম,আর্টিকেল নম্বর এবং ভেতরে কি আছে মোটামুটি নিজের ভাষায় লেখার মত প্রস্তুতি থাকাটা খুব জরুরী

)৩১তম

No comments:

Post a Comment